"> ঢাকায় এশিয়া ওপেন একসেস সম্মেলন – Nurunnaby Chowdhury

ঢাকায় এশিয়া ওপেন একসেস সম্মেলন

নানা আয়োজনের মাধ্যমে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়েছে দুইদিনের ওপেন একসেস সম্মেলন। গত ৬ ও ৭ মার্চ  ‘এশিয়া ওপেন একসেস ঢাকা ২০১৯’ নামের এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ঢাকার বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসি) মিলনায়তনে। কনফেডারেশন অব ওপেন একসেস রিপোজিটোরিসের (সিওএআর) সহযোগিতায় চলতি বছর বাংলাদেশে এ সম্মেলনের আয়োজন করে বিএআরসি। আর সম্মেলনের সহযোগী ছিল সেন্টার ফর ওপেন নলেজ (সিওকে)। সম্মেলনে বিশ্বের ১৪টি দেশের গবেষক, শিক্ষাবিদসহ ওপেন একসেস নিয়ে কাজ করা অনেকেই অংশ নেন।

সম্মেলনের উদ্বোধন করে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। তিনি বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষে বর্তমান সরকার নানা ধরনের উদ্যোগ নিয়ে কাজ করছে। বিশেষ করে সরকার ইতিমধ্যে ওপেন গভর্নমেন্ট পোর্টাল করেছে এবং বিশ্বের সবচেয়ে বড় ওয়েবসাইটের মালিকও এখন বাংলাদেশ।’ তিনি উল্লেখ করেন, ‘সরকার ওপেন ডেটা, বিগ ডেটার মতো বিষয়গুলো বিভিন্ন পর্যায়ে কাজ শুরু হয়েছে যেসব উদ্যোগ থেকে কিভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ নানা মাধ্যমে তথ্যপ্রযুক্তি কাজে লাগানো যায় দারুণ কিছু করা যায় সেগুলোও নিয়ে কাজ চলছে।’ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ওয়ায়েস কবির, কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কমলারঞ্জন দাস ও বিআরসির পরিচালক মো. আজিজ জিলানী চৌধুরী।

উদ্বোধনে সম্মেলনের সমন্বয়ক ও বিএআরসি প্রধান ডকুমেন্টেশন কর্মকর্তা ড. সুস্মিতা দাস বলেন, ‘এবারের সম্মেলনে থাকছে একাধিক সেমিনার, কর্মশালা, গোলটেবিল বৈঠক। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা সংস্থার অনেকেই সম্মেলনে নিজেদের প্রবন্ধ উপস্থাপন করছেন।’

দুইদিনের সম্মেলনে ছিল একাধিক সেমিনার, কর্মশালা, গোলটেবিল বৈঠক ইত্যাদি। সম্মেলনে মূলত ওপেন একসেস, ওপেন ডেটা, ওপেন সায়েন্স, ওপেন এডুকেশন এবং উন্মুক্ত লাইসেন্সের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ছিলো নানা আয়োজন। 

আয়োজকেরা জানান, ’আন্তর্জাতিক ভাবে প্রতি বছরই এ সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হয়। এবার বাংলাদেশে আয়োজন করা হয়েছে। এশিয়ার মধ্যে ওপেন একসেস, ওপেন সায়েন্স, ওপেন এডুকেশনের সামগ্রিক অবস্থাসহ বাংলাদেশে এ ধরনের কার্যক্রমগুলো নানা বিষয় সম্মেলনে তুলে ধরা হয়।’

সম্মেলনের শুরুর দিনে একাধিক প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়।  এর মধ্যে ছিল ‘ওভারভিউ অব কারেন্ট স্ট্যাটাস অব ওপেন অ্যাকসেস অ্যান্ড ওপেন সায়েন্স’, ‘ওপেন এডুকেশন: ফোকাস ইন বাংলাদেশ’, ‘ইন্সটিটিউশনাল রোলস ইন সার্পোটিং ওপেন সায়েন্স’, ‘এশিয়ান কান্ট্রি আপডেটস’ ইত্যাদি।

সম্মেলনের শেষ দিনে একাধিক বিষয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপনা, আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে ছিল ‘ওপেন রিসার্স ডেটা অ্যান্ড ক্রিয়েটিভ কমন্স ইন বাংলাদেশ’, ‘ব্রেকিং ডাউন সাইলস-গ্লোবাল অ্যালাইনমেন্ট অ্যান্ড ইন্টারপ্রিভিলিটি’, ‘আইডেন্টিফাইং গ্যাপস অ্যান্ড নেক্সট স্টেপস ফর বাংলাদেশ’।

পরে আয়োজিত সমাপনী অনুষ্ঠানে কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ওয়ায়েস কবীরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আব্দুর রউফ, যুগ্ম সচিব হাসানুজ্জামান কল্লোল, সিওএআরের নির্বাহী পরিচালক ক্যাথেলিন শেরের, নির্বাহী সদস্য কাজু ইমাজিসহ অনেকে। বক্তারা বলেন, বাংলাদেশে ওপেন একসেস নীতিমালা প্রয়োজন। এর ফলে বিভিন্ন ধরনের গবেষণা, কার্যক্রম, তথ্য সকলের জন্য সহজে উন্মুক্ত হবে যা গবেষকসহ যেকোন ব্যবহারকারীর জন্য প্রাপ্তির জায়গাটি সহজ করবে।

সমাপনী পর্বে পুরো সম্মেলনের উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলো থেকে সুপারিশ তুলে ধরেন আইসিডিডিআর,বি লাইব্রেরি অ্যান্ড ইনফরমেশন সেন্টার বিভাগের প্রধান মো. নাজিম উদ্দিন। তিনি ওপেন একসেস নীতিমালা, উন্মুক্ত লাইসেন্সের ব্যবহার বাড়ানো, ওপেন রিপোজিটরির আধুনিকায়ন সহ নানা বিষয় নিয়ে কাজ করার আহবান জানান। এছাড়া সম্মেলনের সহ-আয়োজক সেন্টার ফর ওপেন নলেজের (সিওকে) সভাপতি অধ্যাপক মোস্তফা আজাদ কামাল ওপেন এডুকেশন নীতিমালাটিও দ্রুত চালু করার উপর গুরুত্ব দেন। এতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে, গবেষণা কেন্দ্রসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শতাধিক অংশ নিয়েছেন।

ড. সুস্মিতা দাস

প্রধান ডকুমেন্টেশন কর্মকর্তা, বিএআরসি ও

সমন্বয়ক, এশিয়া ওপেন একসেস ঢাকা ২০১৯

ড. সুস্মিতা দাস

বাংলাদেশে ওপেন একসেস নিয়ে নানা ধরনের সচেতনতামূলক কাজগুলোকে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে তুলে ধরতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। ব্যক্তিগত ভাবে আমি দীর্ঘদিন ধরেই ওপেন একসেস নিয়ে কাজ করছি। গত বছর নেপালে যখন এ সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হয় তখন আমি এ বছর বাংলাদেশে সম্মেলনটি করার ব্যাপারে প্রস্তাব দেই। সিওএআর রাজি হয় এবং বাংলাদেশে প্রথম বারের মতো আমরা এ সম্মেলনটি আয়োজন করি।

আমরা এশিয়ার দেশগুলোতে ওপেন একসেস নানা কার্যক্রমের বিষয়গুলো তুলে ধরেছি। পাশাপাশি বাংলাদেশের কার্যক্রম এবং কোন কোন বিষয়গুলোতে গুরুত্ব দেওয়া দরকার সেগুলো নিয়েও আলোচনা করেছি সম্মেলনে।’ সম্মেলনে বিশ্বব্যাপী চলতে থাকা ওপেন এডুকেশন সপ্তাহ উপল¶েও ছিল বিশেষ আয়োজন ছিলো। সম্মেলন শেষে আমরা বাংলাদেশে ওপেন একসেস নীতিমালা তৈরির একটি উদ্যোগ নিয়েও আলোচনা করেছি। খুব শিগগিরই আমরা বাংলাদেশে এ নীতিমালা যাতে চালু হয় সে বিষয়ে কাজ করবো।

অধ্যাপক মোস্তফা আজাদ কামাল

সভাপতি, সেন্টার ফর ওপেন নলেজ (সিওকে)

অধ্যাপক ড. মোস্তফা আজাদ কামাল

বাংলাদেশে ওপেন ডেটা, ওপেন এডুকেশন, ওপেন সায়েন্স, উন্মুক্ত লাইসেন্স নিয়ে ২০১৩ সাল থেকে কাজ করে যাচ্ছে সেন্টার ফর ওপেন নলেজ (সিওকে)। আমরা বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরেই কাজ করে যাচ্ছি উন্মুক্ত নানা মাধ্যমে। যেহেতু এ সম্মেলনটিও ওপেন একসেস, ওপেন সায়েন্স, ওপেন এডুকেশন এবং ক্রিয়েটিভ কমন্স বিষয়ে ছিল তাই আমরাও এতে যুক্ত হয়েছি সহ-আয়োজক হিসেবে। সম্মেলনে আমরা সে বিষয়গুলো তুলে ধরার পাশাপাশি এবং নানা আয়োজনে সহযোগিতা করছি। ইতিমধ্যে আমরা জাতীয় শিক্ষানীতিতে ওপেন এডুকেশন নীতিমালা যুক্ত করার বিষয়টি নিয়ে অনেকটাই এগিয়েছি। আশা করছি খুব শিগগিরই ওপেন একসেস নীতিমালা নিয়েও আমরা কাজ শুরু করবো। পাশাপাশি বাংলাদেশে ক্রিয়েটিভ কমন্স-র নানা বিষয়গুলো নিয়ে আমরা প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, সংগঠন, সংস্থার সাথে কাজ শুরু করেছি। ওপেন ডেটা এবং ওপেন গভর্ণমেন্ট ডেটাসহ নানা কাজে আমরা সহযোগিতাও করছি।

** এপ্রিল ২০১৯ মাসের সিনিউজে প্রকাশিত

Leave a Reply